সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল নগরীর বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ইউরোটেল বিডি অনলাইন লিমিটেডের টেকনিশিয়ান নাদিম হোসেন ফকিরের মৃত্যুর নতুন রহস্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নাদিমের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় প্রাইভেটকারটি। সজোরে ধাক্কাটি এত ভয়াবহ ছিল যে মূল সড়ক থেকে ছিটকে বাইরে পরে যান নাদিম ও তার মোটরসাইকেল।
ওই এলাকার এক দোকানী বলেন, গাড়িটি বিএম কলেজের মসজিদ গেট থেকে স্বাভাবিক গতিতেই ছিল। প্রাইভেটকারটির সামনে স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল নাদিম। পিছন দিক থেকে প্রাইভেটকারটি বেশ কয়েকবার হর্ণ দিয়ে সাইড চাইছিল। কিন্তু নাদিমের বাম পাশে আরেকটি থ্রি-হুইলার থাকায় সাইড দিতে পারেনি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সজোরে ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেলকে।
আরেক চা দোকানী বলেন, ধাক্কা দেওয়ার পরে এক সেকেন্ডও গতি কমায়নি প্রাইভেটকারটি। দ্রুত আরো গতি বাড়িয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রাইভেটকারের মধ্যে আরো দুজনকে বসে থাকতে দেখা গেছে।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ঘটনাটি যদি দুর্ঘটনা হতো তাহলে মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগার পরে প্রাইভেটকারটি থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহির সাহায্যে এগিয়ে আসতো। কিন্তু মোটরসাইকেল চালক নাদিমকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেওয়ায় না থামিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ঘটনার আকস্মিকতা দেখে কেউ বলবে না এটি দুর্ঘটনা। আমি মনে করি এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। ওদিকে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি সিটি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে শনাক্ত করা গেছে, প্রাইভেটকারটির নাম্বার। ঝালকাঠি-ছ ৫১০৩৫৯।
ইউরোটেল বিডি অনলাইন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, নাদিমের মৃত্যু কোন স্বাভাবিক দুর্ঘটনায় হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি ইচ্ছা করেই ধাক্কা দিয়েছে নাদিমের মোটরসাইকেলকে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে নাদিমের মৃত্যুর পেছনে যে বা যারা দায়ী তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।
নাদিমকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার বিচার চেয়ে গতকাল বরিশাল নগরীর সদর রোডে মানবন্ধন করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মহানগর শাখা। ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান রাকিবের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন লামিয়া সাইমুন, জিম, নাহিত ইসলাম রাকিবুল ইসলাম প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সড়কে এরকম তাজা প্রাণ নতুন কোনো ইস্যু নয়। সরকারের নিয়ন্ত্রণে অবেলায় সারাদেশে এটি সাধারণ মানুষের মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে। বরিশালেও এর ব্যতিক্রম নয়। নেতৃবৃন্দ নাদিম হত্যায় দোষীদের গ্রেফতার, সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে নাদিম নিহত হওয়ার ২৪ ঘন্টা পার হলেও তার দাফন সম্পন্ন হয়নি। নিহতের পিতা সন্তাদের মরদেহ দেখার জন্য ফিরছেন। কিন্তু বিমানে দেরি হওয়ায় গতকাল রাতে দাফনের কথা থাকলে তা পেছানো হয়েছে। তার মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ মার্চ) নাদিমের পিতা বাড়িতে পৌঁছার পরে সকাল ৯টায় আরআরএফ পলিশ লাইন্স মাঠে জানাজা শেষে দাফন হবে বলে পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। নাদিমের মৃত্যুতে পরিবার, কর্মস্থল ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মা ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৬ মার্চ) বিকেলে বরিশাল নগরীর সরকারি ব্রজমোহন কলেজ রোডের বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে নাদিমকে চাপা দিয়ে হত্যা করে প্রাইভেটকারটি। নাদিম সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিল্ববাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা মনিরুল ইসলাম আশ্রাব প্রবাসী। পরিবারের বড় সন্তান নাদিম সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানী ইউরোটেল বিডি অনলাইন লিমিটেডে টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।
Leave a Reply